দিনাজপুর বোর্ড এসএসসি ২০২০: বাংলা ২য় - প্রশ্ন ও উত্তর

দিনাজপুর বোর্ড এসএসসি ২০২০: বাংলা ২য় - প্রশ্ন ও উত্তর

Yeasir Arafat Yeasir Arafat | 3 min read
2 weeks ago

বহুনির্বাচনি

পূর্ণমান: ৩০
 সময়: ৩০ মিনিট

১. ‘তিনি গতকাল হাটে যাননি’—এটি কোন কালের উদাহরণ?
ক) ঘটমান বর্তমান
খ) সাধারণ বর্তমান ✅
গ) পুরাঘটিত বর্তমান
ঘ) ঘটমান অতীত

২. ‘অপনোদন’ শব্দে ‘অপ’ উপসর্গ ব্যবহার করা হয়েছে কোন অর্থে?
ক) স্থানান্তর ✅
খ) বিপরীত
গ) নিকৃষ্ট
ঘ) বিকৃত

৩. ‘বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায়।’ এ বাক্যে কোন জাতীয় কর্তা উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) মূখ্য কর্তা
খ) প্রযোজক কর্তা
গ) ব্যতিহার-কর্তা ✅
ঘ) প্রযোজ্য কর্তা

৪. বাংলায় ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞায় কোন পুরুষ ব্যবহৃত হয় না?
ক) উত্তম পুরুষ ✅
খ) নাম পুরুষ
গ) মধ্যম পুরুষ
ঘ) তুচ্ছার্থক পুরুষ

৫. ফলাহার > ফলার, ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়মানুযায়ী এটিকে কী বলা হয়?
ক) অন্তর্হতি ✅
খ) ব্যঞ্জনচ্যুতি
গ) অভিশ্রুতি
ঘ) বিষমীভবন

৬. একটিমাত্র ধ্বনিবিশিষ্ট শব্দের উচ্চারণ সব সময় কেমন হয়?
ক) হ্রস্ব
খ) স্বাভাবিক
গ) দীর্ঘ ✅
ঘ) সংবৃত

৭. যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে কোন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়?
ক) ড্যাশ ✅
খ) কোলন ড্যাশ
গ) সেমিকোলন
ঘ) কমা

৮. যোগরূঢ় শব্দ গঠিত হয় কোন প্রক্রিয়ায়?
ক) সন্ধির মাধ্যমে
খ) উপসর্গ যোগে
গ) সমাস নিষ্পন্ন হয়ে ✅
ঘ) প্রত্যয় যোগে

৯. ‘ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো’-এ বাক্যে ‘চোখে চোখে’ দ্বিরুক্ত শব্দ কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) সতর্কতা ✅
খ) ভাবের প্রগাঢ়তা
গ) কালের বিস্তার
ঘ) আধিক্য

১০. ‘যে ভবিষ্যৎ না ভেবেই কাজ করে’—এককথায় কী হবে?
ক) অপরিণামদর্শী
খ) অবিমৃশ্যকারী ✅
গ) অবিসংবাদিত
ঘ) অদৃষ্টপূর্ব

১১. কোন বানানটি সঠিক?
ক) মুমুর্ষু
খ) মমূর্ষু
গ) মুমূর্ষু ✅
ঘ) মুমূর্ষ

১২. ‘তার দর্শন মাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম।’ এটি কোন বাক্যের উদাহরণ?
ক) মিশ্র বাক্য
খ) জটিল বাক্য
গ) যৌগিক বাক্য
ঘ) সরল বাক্য ✅

১৩. ‘খ্রিষ্টাব্দ’ মিশ্র শব্দটি কোন শব্দের মিলনে সৃষ্ট হয়েছে?
ক) ইংরেজি + তৎসম ✅
খ) ইংরেজি + বাংলা
গ) ইংরেজি + ফারসি
ঘ) ফারসি + আরবি

১৪. এক এককের চারভাগের তিনভাগ কে পরবর্তী সংখ্যার কী বলা হয়?
ক) সোয়া
খ) পৌনে ✅
গ) তেহাই
ঘ) পোয়া

১৫. প্রত্যক্ষ উক্তির কালবাচক পদকে পরোক্ষ উক্তিতে কী অনুসারে করতে হয়?
ক) পুরুষ
খ) বচন
গ) অর্থ ✅
ঘ) ক্রিয়া

১৬. নির্দেশক সর্বনামের পর টা, টি যুক্ত হলে তা কী হয়ে যায়?
ক) সুনির্দিষ্ট ✅
খ) নির্দিষ্ট
গ) অনির্দিষ্ট
ঘ) নিরর্থক

১৭. ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি’-এখানে ‘মাঝে’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) বাইরে
খ) সঙ্গে
গ) ব্যাপ্তি
ঘ) মধ্যে ✅

১৮. ‘জাত’ অর্থে তদ্ধিত প্রত্যয়ের ব্যবহার করা হয়েছে কোনটিতে?
ক) ব্যাপারি
খ) উমেদারি
গ) দোকানি
ঘ) ভাগলপুরি ✅

১৯. ‘অহর্নিশ’ শব্দের শুদ্ধ সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি?
ক) অহঃ + নিশ
খ) অহঃ + নিশা ✅
গ) অহ + নিশা
ঘ) অহ + নিশ

২০. ‘উভয় সংকট’ এর সমার্থক বান্ধারা কোনটি?
ক) শাপে বর
খ) শাঁখের করাত ✅
গ) খণ্ড প্রলয়
ঘ) গোঁফ খেজুরে

২১. ‘অ’ উপসর্গটি নিচের কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়নি?
ক) প্রতি
খ) অভাব ✅
গ) বিরোধ
ঘ) অতিরিক্ত

২২. ‘যশো+অংশ’ সন্ধি হলে কোনটি হবে?
ক) যশংশ
খ) যশঅংশ
গ) যশঃঅংশ
ঘ) যশাংশ ✅

২৩. কোন বচনের সঙ্গে বাক্যের কাল বা ক্রিয়া পরিবর্তিত হয়?
ক) একবচন
খ) বহুবচন
গ) পুরুষ
ঘ) কোনোটিই নয় ✅

২৪. ‘যে কুড়িয়ে জীবন ধারণ করে’—এর জন্য এককথায় কী হবে?
ক) কৃচ্ছ্রসাধক
খ) কুঠারী
গ) কৃপণ
ঘ) কুঁড়েঘরী ✅

২৫. ‘গঙ্গার জল’ শব্দগুচ্ছের মধ্যে কী রয়েছে?
ক) সম্বন্ধ কারক ✅
খ) কর্ম কারক
গ) করণ কারক
ঘ) অধিকরণ কারক

২৬. ‘শিরোধার্য’ শব্দে কোন উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) আ ✅
খ) সু
গ) শি
ঘ) অধি

২৭. ‘বাণী’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?
ক) নিঃশব্দ ✅
খ) মূর্খতা
গ) প্রশংসা
ঘ) অন্ধকার

২৮. ‘গড়’ শব্দটি কোন জাতীয়?
ক) তৎসম
খ) তদ্ভব ✅
গ) দেশজ
ঘ) বিদেশি

২৯. ‘সমস্ত জগৎ একটাই গ্রাম’-এরূপ ভাবনার জন্ম দিয়েছে কে?
ক) টমাস হেনরি
খ) হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান ✅
গ) রবার্ট ফ্রস্ট
ঘ) বার্ট্রান্ড রাসেল

৩০. ‘শব্দ করে করে আমাদের মধ্যে আলোকপাত করেছিল’—এ বাক্যে ক্রিয়ার ধরণ কী?
ক) উদ্দিষ্ট ✅
খ) নিষ্পন্ন
গ) অসম্পন্ন
ঘ) কার্য


রচনামূলক প্রশ্ন

পূর্ণমান : ৭০
সময় : ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

১. যেকোনো একটি বিষয়ে অনুচ্ছেদ লেখো: [১০]
(ক) গ্রন্থাগার
(খ) যানজট

২. যেকোনো একটি বিষয়ে পত্র লেখো: [১০]

(ক) মনে করো, তুমি সাকিব। তোমার বন্ধু শাবাবকে শিক্ষামূলক সফরের উপকারিতা বর্ণনা করে একটি পত্র লেখো।

অথবা

(খ) মনে করো, তুমি হাওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র রাসেল। তোমার বিদ্যালয়ের পানিতে আর্সেনিক আছে। আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভার মেয়রের কাছে একটি পত্র লেখো।

৩. সারাংশ লেখো: [১০]

(ক)
 বাল্যকাল হইতেই আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যাহা নিতান্ত আবশ্যক, তাহাই কন্ঠস্থ করিতেছি। তেমন করিয়া কোনো মতে কাজ চলে মাত্র, কিন্তু মনের বিকাশ লাভ হয় না। হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে, কিন্তু আহারাদি রীতিমতো হজম করিবার জন্য হাওয়া অবশ্যক। তেমনি একটি শিক্ষাপুস্তককে রীতিমতো হজম করিতে অনেকগুলি অপাঠ্যপুস্তকের সাহায্য আবশ্যক। ইহাতে আনন্দের সহিত পড়িতে পড়িবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। গ্রহণশক্তি, ধারণাশক্তি, চিন্তাশক্তি বেশ সহজে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ফল লাভ করে।

অথবা

(খ)
 দৈন্য যদি আসে আসুক, লজ্জা কিবা তাহে? মাথা উঁচু রাখিস।
 সুখের সাথী মুখের পানে যদি নাহি চাহে, ধৈর্য ধরে থাকিস।
 রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে, বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস।
 আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় ভেঙে পড়ে, ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস।

৪. যেকোনো একটির ভাব-সম্প্রসারণ করো: [১০]

(ক) দুর্নীতি জাতীয় জীবনের সকল উন্নতির অন্তরায়।
 (খ) পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।

৫. যেকোনো একটি বিষয়ে প্রতিবেদন লেখো: [১০]

(ক) মনে করো, তুমি হরিশ্চর স্কুলের ছাত্র মানিক। তোমার স্কুলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।

(খ) মনে করো, তুমি আবিদ। ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা। মাদকের কুফল ও প্রতিকার সম্বন্ধে তোমার পত্রিকার জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।

৬. যেকোনো একটি বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করো: [২০]

(ক) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
 (খ) অধ্যবসায়
 (গ) বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ

উত্তর

১. অনুচ্ছেদ লেখো

গ্রন্থাগার
গ্রন্থাগার জ্ঞান অর্জনের অপরিহার্য কেন্দ্র। এটি একটি নির্জন এবং শান্ত পরিবেশ, যেখানে জ্ঞানপিপাসু পাঠকেরা বিভিন্ন বিষয়ে বই পড়ার সুযোগ পায়। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে। এখানে সাহিত্যের রত্নভাণ্ডার থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের অজানা তথ্য সংগ্রহ করা যায়। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন এবং গবেষণার জন্য গ্রন্থাগার অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

অথবা,
 যানজট
যানজট আধুনিক শহর জীবনের একটি বড় সমস্যা। এটি কর্মঘণ্টার অপচয় এবং মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। যানজটের ফলে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পায় এবং আর্থিক ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানে পরিকল্পিত সড়কব্যবস্থা, ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন।

২. পত্র লেখো

(ক) শিক্ষামূলক সফরের উপকারিতা

প্রিয় শাবাব,
তোমার মঙ্গল কামনায় আমার শুভেচ্ছা। আশা করি ভালো আছ। আজ তোমাকে শিক্ষামূলক সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে জানাব। শিক্ষামূলক সফর আমাদের জ্ঞান বাড়ায় এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়। এটি বইয়ের তত্ত্বকে বাস্তবে দেখার সুযোগ করে দেয়। যেমন, কোনো ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে আমরা ইতিহাসকে গভীরভাবে বুঝতে পারি। শিক্ষামূলক সফর মনকে সতেজ করে এবং আমাদের নতুন কিছু শেখায়। আশা করি, তুমি আমার সঙ্গে আগামী সফরে যোগ দেবে।
ইতি,
তোমার বন্ধু
সাকিব

অথবা,
 (খ) আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের জন্য আবেদন

বরাবর,
মেয়র, দিনাজপুর পৌরসভা।
বিষয়: বিদ্যালয়ে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের আবেদন।

মাননীয়,
 আমরা, হাওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা, আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের বিদ্যালয়ের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। ফলে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। আমরা আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করার জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করছি।
 আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
 বিনীত,
 রাসেল
 শ্রেণি: দশম, হাওলা উচ্চ বিদ্যালয়।

৩. সারাংশ লেখো

(ক) সারাংশ:
সঠিক শিক্ষা কেবল পাঠ্যপুস্তকের মুখস্থ পড়ায় সীমাবদ্ধ নয়। অপাঠ্য বইয়ের সাহায্যে শিক্ষার আনন্দ উপভোগ করা যায়। এতে মনের বিকাশ ঘটে, গ্রহণ, ধারণ, এবং চিন্তাশক্তি বাড়ে।

অথবা,
 (খ) সারমর্ম:
দুঃখ-দৈন্য জীবনকে কঠিন করলেও সাহস এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চরম পরিস্থিতিতেও মনের শক্তি দিয়ে মাথা উঁচু রাখতে বলা হয়েছে।

৪. ভাব-সম্প্রসারণ

(ক) দুর্নীতি জাতীয় জীবনের সকল উন্নতির অন্তরায়।
দুর্নীতি হলো একটি সমাজের জন্য ভয়াবহ ব্যাধি, যা জাতীয় জীবনের সকল উন্নতির অন্তরায়। এটি মানুষের নৈতিক মূল্যবোধকে নষ্ট করে এবং সমাজে অসাম্য ও অন্যায়ের সৃষ্টি করে। দুর্নীতির ফলে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে, উন্নয়নমূলক কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয় এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং অর্থ আত্মসাতের মতো কাজগুলো দুর্নীতির প্রধান উদাহরণ। দুর্নীতি একটি জাতির অগ্রগতিকে ধীর করে দেয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং নৈতিকতার চর্চা করতে হবে, যাতে আমাদের দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে।

অথবা,
 (খ) পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।
"পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন"—এই প্রবাদটি মানুষের স্বার্থপরতা ও অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা থেকে আসা ফলাফলের দিকটি তুলে ধরে। এটি বোঝায় যে যারা অন্যকে ক্ষতি করতে চায়, তারা অজান্তেই নিজেদের জন্য ক্ষতির বীজ বপন করে। কোনো ব্যক্তির নীতিহীন কাজ যেমন অন্যের জীবনে অশান্তি বা সমস্যা তৈরি করে, ঠিক তেমনি সেই কাজের প্রতিফল একদিন তার নিজের জীবনেও ফিরে আসে। এ প্রবাদটি আমাদের সতর্ক করে দেয় যে অন্যের ক্ষতি না করে বরং ভালো কাজের মাধ্যমে নিজের ও অন্যের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে চেষ্টা করা উচিত।

৫. প্রতিবেদন লেখো

(ক) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

প্রতিবেদন: হরিশ্চর স্কুলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

গত ২১ ফেব্রুয়ারি হরিশ্চর স্কুলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও আবেগের সঙ্গে পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এবং অভিভাবকরা এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদদের স্মরণ করেন।

পরে বিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, শহীদদের আত্মত্যাগ, এবং মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করে। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে গান, কবিতা আবৃত্তি এবং নাটিকা পরিবেশিত হয়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত নাটিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর বক্তব্যে বলেন, "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সংরক্ষণ ও চর্চার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।" এই অনুষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জাগ্রত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।


অথবা,
 (খ) মাদকের কুফল ও প্রতিকার

প্রতিবেদন: মাদক – এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি

মাদক একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক সমস্যা, যা বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এটি কেবল ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং পরিবার এবং সমাজের ওপরও বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলে। মাদকের প্রভাবে তরুণ সমাজ ক্রমশ কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মাদক প্রতিরোধে সর্বপ্রথম পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। পরিবার যদি তাদের সন্তানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে এবং তাদের কার্যক্রমের প্রতি নজর রাখে, তবে মাদকের কবল থেকে তরুণদের রক্ষা করা সহজ হবে। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয়ভাবে মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং মাদক চোরাচালান ও এর ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে হবে।

এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানানো এবং সঠিক জীবনের প্রতি অনুপ্রাণিত করা প্রয়োজন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যদি মাদকের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে কাজ করে, তবে এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব।


৬. প্রবন্ধ রচনা

(ক) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ভূমিকা:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল বাঙালির বহু ত্যাগের ফসল। ১৯৭১ সালের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণ এবং অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। সর্বস্ব ত্যাগ করেও বাঙালি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ করে।

প্রেক্ষাপট:
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল: পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। শাসন-শোষণ এবং বৈষম্যের শিকার পূর্ব বাংলার মানুষ ধীরে ধীরে স্বাধীনতার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ:
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটে। এরপর ১৯৬৬ সালের ছয় দফা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি বুঝতে পারে যে স্বাধীনতা ছাড়া অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

স্বাধীনতার ডাক:
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিকে স্বাধীনতার পথে উদ্বুদ্ধ করে। এই ভাষণে তিনি স্পষ্ট করেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"

২৫শে মার্চের কালরাত্রি:
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় গণহত্যা চালায়। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ:
২৬শে মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পুলিশ, ইপিআর, আনসার এবং সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশ নেয়। পাশাপাশি ভারতে গিয়ে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয় অনেক তরুণ।

মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধ:
মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে জেনারেল এম এ জি ওসমানী যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের জন্য দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। নিয়মিত ও গেরিলা বাহিনী একত্রে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়।

মুজিবনগর সরকার:
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের কূটনৈতিক সমর্থন আদায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণ ও পেশাজীবীদের ভূমিকা:
মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধ তাই ‘গণযুদ্ধ’ নামেও পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা:
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। গেরিলা আক্রমণে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়।

মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা:
নারীরা সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা ও গেরিলা কার্যক্রমে সাহায্য করে।

উপসংহার:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বিশ্বের ইতিহাসে একটি অনন্য সংগ্রাম। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন। আমাদের দায়িত্ব এই স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

অথবা,
 (খ) অধ্যবসায়
ভূমিকা
প্রতিটি মানুষের জীবনে সফলতা অর্জন করতে প্রচেষ্টা লাগে। সফলতার পথ কঠিন হলেও, যারা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কাজ করেন, তারা সফল হতে পারেন। জীবনে বাধা-বিপত্তি আসবে, কিন্তু যারা চেষ্টা চালিয়ে যান, তারা সফল।

অধ্যবসায় কী
অধ্যবসায় হচ্ছে অবিচল প্রচেষ্টা, যেখানে কেউ লক্ষ্য পূরণের জন্য থেমে না গিয়ে কাজ করে। এটি সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে ব্যক্তি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যায়।

অধ্যবসায় কীভাবে সফলতার পথে সহায়ক
অধ্যবসায়ী ব্যক্তি কখনোই থেমে যায় না, তার লক্ষ্য পূরণের জন্য অবিচল থাকে। বৈজ্ঞানিক বা সাহিত্যিকদের সফলতার পেছনে ছিল অধ্যবসায়। উদাহরণস্বরূপ, থমাস এডিসন শতাধিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেন।

অধ্যবসায় ও সফলতার সম্পর্ক
অধ্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি। ব্যর্থতা পরেও যে মানুষ চেষ্টা চালিয়ে যায়, তার সফলতা নিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানী এডিসন এবং অন্যান্য সফল মানুষদের পিছনে ছিল অধ্যবসায়।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব
অধ্যবসায় আমাদের জীবনে সাফল্য অর্জনের শক্তি প্রদান করে। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের উক্তি: "কেন পান্থ ক্ষান্ত হও" আমাদের অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বুঝাতে সাহায্য করে।

ব্যক্তিগত জীবনে অধ্যবসায়
জীবনের পথে চলতে গিয়ে অধ্যবসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা পরিশ্রম করে, তারা সফলতা অর্জন করে।

ছাত্র জীবনে অধ্যবসায়
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শুধুমাত্র মেধা থাকলেই সফলতা আসে না। নিয়মিত অধ্যয়ন ও পরিশ্রমেই সফলতা পাওয়া যায়।

মানব সভ্যতায় অধ্যবসায়
মানব সভ্যতার উন্নতি হয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। অতীতে মানুষ গুহায় বসবাস করলেও তাদের অধ্যবসায়ই সভ্যতা গড়ে তুলেছে।

মনীষীদের জীবনে অধ্যবসায়
বিশ্বের সফল ব্যক্তিত্বদের জীবনে ছিল অধ্যবসায়। ফেরদৌসী, নিউটন, রবার্ট ব্রুসের মতো ব্যক্তিরা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফল হয়েছেন।

অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ সাফল্য
অধ্যবসায় আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক শক্তি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য আসে।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়
জাতীয় উন্নতিতে অধ্যবসায়ের ভূমিকা অপরিসীম। একটি জাতির সাফল্য তার নাগরিকদের অধ্যবসায়ের ওপর নির্ভর করে।

বিজ্ঞানে অধ্যবসায়
বিজ্ঞানে অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিজ্ঞানীরা তাদের পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নতুন আবিষ্কার করেন।

অধ্যবসায়ের মূল্য
অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কোনো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও মানুষ তা মোকাবিলা করতে সক্ষম।

অধ্যবসায় এবং প্রতিভা
বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে, সফলতা শুধুমাত্র প্রতিভার উপর নির্ভর করে। তবে, প্রতিভা থাকতে হবে, তবে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়।

সাফল্যের চাবিকাঠি
অধ্যবসায় ছাড়া সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। বিশ্বের বড় ব্যক্তিত্বরা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।

অধ্যবসায়ের চর্চা
অধ্যবসায় একটি অভ্যাস যা চর্চার মাধ্যমে অর্জন করা যায়, এবং এটি জীবনের বাধাগুলো অতিক্রম করতে সাহায্য করে।  অধ্যবসায়ের চর্চা একজন মানুষের মনোবল শক্তিশালী করে এবং তাকে কোনো পরিস্থিতিতেই নতি স্বীকার করতে বাধ্য করে না। এটি শুধু একটি আবেগ নয়, বরং একটি গুণ, যা অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করে। এ জন্যেই অধ্যবসায়ের গুরুত্ব প্রতিটি মানুষের জীবনে অপরিসীম। 

উপসংহার

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে, আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং সব বাধা অতিক্রম করতে সহায়ক হয়। শুধু প্রতিভা নয়, অধ্যবসায়ই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। যা কোনো পরিস্থিতিতেই থেমে থাকে না, বরং প্রতিনিয়ত তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন পথ তৈরি করে। সফলতার প্রতিটি পর্যায়ে অধ্যবসায় থাকে, তাই এটি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। 

অথবা,
 (গ) বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, এবং নদীভাঙন এ দেশের মানুষের জন্য নিয়মিত চ্যালেঞ্জ। দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিকল্পিত উদ্যোগ এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

Discussions

Login to Post Comments
No Comments Posted